
এ আসনে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করায় আসনটি ভিআইপি আসনের মর্যাদা পায়। এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক এমপি ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কুয়েত প্রবাসী আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শিল্পপতি শহীদ ইসলাম পাপুল, স্বাচিপ নেতা এহসানুল কবীর জগলুল, বিমানমন্ত্রীর জামাতা সাইদুল বাকীন ভূইয়া সহ আওয়ামী লীগের নৌকার টিকেট পেতে সব ধরনের চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।এছাড়াও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় আছেন সালাহ উদ্দিন রিগান। দলীয় কোন পদ না থাকলেও ফেসবুকে ও পোষ্টারে নিজকে নৌকার প্রচারণায় যুক্ত রেখেছেন রিগান। কিনেছেন সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরমও।
তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হারুনুর রশিদের ব্যক্তি ইমেজ নৌকা প্রতীকের জয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে নেতা-কর্মীদের ধারণা। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন একজন সুবক্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। দলের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করেন। তৃণমূলের কর্মীদের সময় দেন, খোঁজ-খবর নেন। জেলায় দলীয় কার্যালয় তার নিজস্ব বাসভবনেই দলের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা ও এসেনসিয়াল ড্রাগস এর এমডি এহসানুল কবীর জগলুল একজন ক্লিন ইমেজ অধিকারী ব্যক্তি হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। তিনিও দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
অপরদিকে শহীদ ইসলাম পাপুল নবাগত নেতা হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। ধনাঢ্য ও তরুণ এই নেতা ইতোমধ্যে রাজনীতির মাঠে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন বাইক, বস্ত্র এবং ইউনিয়ন আঃলীগ অফিস করে।
এ আসনে বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও স্থানীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শরিকদের সাথে মনমালিন্যের কারণে দলের ভরাডুবির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তৃণমূলের কর্মীরাশরিকদের সাথে বিভক্ত দূর না করে বিএনপির বিজয় অর্জন করা কঠিন। তবে বিএনপি থেকে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়ার নামই আলোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। দলে কোন বিভেদ নেই বলে জানিয়েছে যুবদল নেতা শফিকুল আলম আলমাছ। লক্ষ্মীপুরে ধাঁনের শিষের প্রতীকে বিপ্লব ঘটবে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কর্মকান্ড জোরালো না হলেও দশম সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ নোমান এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সব সময় নির্বাচনি এলাকায় যাতায়াত করেন তিনি।সভা, সেমিনার, রাস্তাঘাটের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এ আসনে নিজদলীয় এমপি থাকায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আগের চেয়ে বর্তমানে জেলায় জাতীয় পার্টির জনসমর্থন বেড়েছে। নেতাকর্মীদের সাথে এমপির সুসম্পর্ক রয়েছে। মোহাম্মদ নোমান জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচন জোটবদ্ধ হলে মোহাম্মদ নোমান আবারও জাতীয় পার্টি থেকে নমিনেশন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হওয়ার জন্য দেনদরবার করছেন শেখ ফায়জুল শিপন। তবে বর্তমান সাংসদ নোমান এমপি
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচনে না গেলে তাদের প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা আমীর মাও. রুহুল আমিনের নামই আলোচিত হচ্ছে বেশি। যদিও জামায়াতের নিবন্ধন নেই, সেক্ষেত্রে জামায়াত থেকে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন প্রতিবেদককে জানান, তিনি বিগত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তৃণমূলে দলকে সু-সংগঠিত করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বিগত ইউপি নির্বাচন, পৌর নির্বাচন এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে নেত্রী তাকে মনোনয়ন দিবেন বলে প্রত্যাশা করেন।
কুয়েত প্রবাসী আওয়ামী লীগনেতা ও শিল্পপতি শহীদ ইসলাম পাপুল বলেন, কুয়েতে এবং দেশে দলের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্মীপুর সফরে তিনি জনসভায় লোক সমাগম ঘটাতে ব্যাপকভাবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমি এজন সফল ব্যবসায়ী। রাজনীতি করতে এসেছি এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এমপি হলে উন্নয়ন কাজ করতে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারব। তিনিও আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশা করছেন বলে জানান।
সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত মিলে একটি জমজমাট চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় ভোটাররাও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতীক্ষায় রয়েছে।